কবিগুরু ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর’ বিশ্ব সাহিত্যাঙ্গনে উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতই আলোকিত এক নাম। শিলাইদহে রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিকে ধারণ করে কুষ্টিয়া তথা দেশবাসী আজ গৌরবান্বিত। পদ্মার তীরবর্তী সবুজে ঘেরা শিলাইদহ গ্রামখানি কবির ভাল লাগত। তাঁর হৃদয়ে কাব্যভাবের স্পন্দন জাগাত। ‘গীতাঞ্জলী’র কাব্যরস যে তিনি শিলাইদহ থেকেই পেয়েছিলেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কুষ্টিয়া জেলা শহর থেকে শিলাইদহ গ্রামটির দূরত্ব প্রায় ৯ কিলোমিটার। এ গ্রামেই রয়েছে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক কুঠিবাড়ি, যা ছিল এককালের অত্যাচারী নীলকরদের নীলকুঠি। পরে তা কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর পরিবারের জমিদারের কুঠিবাড়ী (বাসস্থান) হিসেবে পরিচিত হয়।
পদ্মার ঢেউ খেলানো প্রাচীরঘেরা ৩৩ বিঘা জমির ওপর তিনতলা এই কুঠিবাড়িটি আজ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে শিলাইদহের বুকে। তবে মূল বাড়িটি রয়েছে আড়াই বিঘার ওপর। চারদিকে আম বাগানের ছায়াঘেরা সি্নগ্ধ পরিবেশ। কাছেই পদ্মা। সব মিলিয়ে এক মায়াবী পরিবেশ। তবে সবুজ শ্যামলিমায় ঘেরা সেই শিলাইদহ এখন আর নেই। সবুজের সংকট পড়েছে বিখ্যাত রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি চত্বরে। এখানকার বহু বছরের পুরনো গাছগুলো একে একে মরে যাচ্ছে। পানির অভাবে বাঁচানো যাচ্ছে না সৌন্দর্যময় বাগানের ফুলগাছও। আজ ২৫ বৈশাখ কবি গুরুর সার্ধশত জন্ম বার্ষিকী। প্রতি বছর এই দিনটি এলেই বদলে যায় কুঠিবাড়ির দৃশ্য। কুঠিবাড়িকে কেন্দ্র করে জমে ওঠে উৎসব, বসে বিরাট গ্রামীণ মেলা। নামে মানুষের ঢল। আগমন ঘটে দেশ-বিদেশের স্বনামধন্য কবি, সাহিত্যিক ও গুণীজনসহ হাজার হাজার দর্শনার্থীর। প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর হয়ে ওঠে স্থায়ীভাবে তৈরি দু’টি মঞ্চ। এসব আয়োজনকে ঘিরে পুরো কুঠিবাড়ী চত্বর হয়ে ওঠে আলোক ঝলমল। ফ্যাকাসে হয়ে পড়া দেয়ালে পড়ে চুনের আচড়। জন্মবার্ষিকীকে ঘিরে তিনদিন ধরে চলে অনুষ্ঠানমালা। এরপর আবার বদলে যায় কুঠিবাড়ির চিত্র। ফিরে যায় সেই আগের অবস্থায়। খাঁ খাঁ করতে থাকে দুটি মঞ্চ। হয় না কোন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। কমে যায় দর্শনার্থীর ভিড়। তবে তা শূন্য হয় না কোনদিনই। কবির যখন ভরা যৌবন এবং কাব্য সৃষ্টির প্রকৃষ্ট সময়, তখনই তিনি বিচরণ করেছেন শিলাইদহে। কখনও একাকী, কখনও স্ত্রী, পুত্র-কন্যা নিয়ে এসেছেন শিলাইদহে, পেতেছেন ক্ষণিকের সংসার; ঘুরে বেড়িয়েছেন বোটে, পালকিতে। যে লেখার মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথ বিশ্ব দরবারে পরিচিত হন; নোবেল পুরস্কার পান, সেই লেখার স্থান শিলাইদহ হওয়ায় কুষ্টিয়াবাসী তথা দেশবাসী আজ গর্বিত। শিলাইদহে বসে রবীন্দ্রনাথ যেসব গান-কবিতা লিখেছেন, তার মধ্যে কুঠিবাড়ির পাশে বকুলতলার ঘাটে বসে লেখা “যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে” গড়াই নদীতে বোটে বসে লেখা “সীমার মাঝে অসীম তুমি বাজাও আপন সুর” “শিলাইদহে বসে লেখা “আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ”, “কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি” প্রভৃতি। কবিগুরু শিলাইদহে ছিলেন ১৯২২ সাল পর্যন্ত। এই সুদীর্ঘ ৩০ বছর এখানে অবস্থানকালে তিনি সৃষ্টি করেছেন সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ।
যেভাবে যাবেনঃ-
কুষ্টিয়া শহর হতে রবীন্দ্রনাথ এর কুটি বাড়ির দূরুত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। কুষ্টিয়া শহর হতে অটো রিক্সা, সিএনজি ও ইজি বাইক ও অন্যান্য বাহন যোগে সহজেই এবং খুবই কম খরচে শিলাইদহ কুটি বাড়ি যাওয়া যায়।