পঞ্চগড় জেলা বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রংপুর বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে উত্তরের জেলা। পঞ্চগড় একটি প্রাচীন জনপদ। প্রাচীন ও মধ্য যুগে এই ভূখণ্ডের পাশেই ছিল মগধ, মিথিলা, গৌর, নেপাল, ভুটান, সিকিম ও আসাম রাজ্যের সীমান্ত। পঞ্চগড় জেলা বর্তমানে যে রকম একটি সীমান্ত অঞ্চল অতীতেও এইরকম ছিল। এই ভূখণ্ডটি পর্যায়ক্রমে শাসিত হয়েছে প্রাগ-জ্যোতিষ, কামরূপ, কামতা, কুচ বিহার ও গৌর রাজ্যের রাজা, বাদশা, সুবাদার এবং বৈকুন্ঠপুর অঙ্গ রাজ্যের দেশীয় রাজা ও ভূস্বামীদের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণে। খ্রিস্টীয় ২য়, ৩য় শতকের মধ্যে রাজা শালিবাহন, রাজা পৃথু এবং রাজা জল্লেশ পঞ্চগড়ের শালবাহান ও ভিতরগড় এলাকায় রাজ্য ও সমৃদ্ধ অঞ্চল গড়ে তুলেছিলেন। মৌর্য, গুপ্ত ও পাল রাজারাও এই অঞ্চল শাসন করেছিলেন।
১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পর পঞ্চগড় থানাটি দিনাজপুর জেলার ঠাকুরগাঁও মহকুমার অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৮০ সালের ঠাকুরগাঁও মহকুমার ৫ টি থানা যথাক্রমে তেতুলিয়া, পঞ্চগড় সদর, আটোয়ারি, বোদা ও দেবীগঞ্জ নিয়ে পঞ্চগড় মহকুমা সৃষ্টি হয়। তার সদর স্থাপিত হয় পঞ্চগড় থানায়। ১৯৮৪ সালের ১লা ফেব্রুয়ারী পঞ্চগড় মহকুমা জেলায় উন্নীত হয়।
নামকরনের ইতিহাস:-
“পঞ্চ” (পাঁচ) গড়ের সমাহার “পঞ্চগড়” নামটির অপভ্রমংশ “পঁচাগড়” দীর্ঘকাল এই জনপদে প্রচলিত ছিল। কিন্তু গোড়াতে এই অঞ্চলের নাম যে, ‘পঞ্চগড়ই’ ছিলো সে ব্যাপারে সন্দেহর কোন অবকাশ নেই। বস্তুত ভারতীয় উপমহাদেশে “পঞ্চ” শব্দটি বিভিন্ন স্থান নামের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। যেমন- পঞ্চনদ, পঞ্চবটী,পঞ্চনগরী, পঞ্চগৌড় ইত্যাদি। “পঞ্চনগরীর” দূরত্ব পঞ্চগড় অঞ্চল থেকে বেশি দূরে নয়। পঞ্চগড় জেলায় বেশকিছু গড় রয়েছে তাদের মাঝে উল্লেখ করার মত গড় হল ভিতরগড়, মিরগড়, রাজনগড়, হোসেনগড়,দেবনগড়। ‘পঞ্চ’ অর্থ পাঁচ, আর ‘গড়’ অর্থ বন বা জঙ্গল। ‘পঞ্চগড়’ নামটি এভাবেই এসেছে।
ভৌগোলিক অবস্থা ও অবস্থান:-
পঞ্চগড় জেলার আয়তন প্রায় ১,৪০৪.৬২ বর্গ কি.মি. বা ৫৪২.৩৩ বর্গমাইল।বাংলাদেশের সর্বোত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের স্থানাঙ্ক প্রায় ২৬.২৫° উত্তর ৮৮.৫০° পূর্ব। পঞ্চগড় জেলার উত্তরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দার্জিলিং জেলা, উত্তর-পশ্চিমে জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার জেলা, দক্ষিণে ঠাকুরগাঁও ও দিনাজপুর জেলা, পশ্চিমে ভারতের পশ্চিম দিনাজপুর ও পূর্ণিয়া জেলা এবং পূর্বে নীলফামারী জেলা অবস্থিত। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের জন্য স্যার সিরিল রেডক্লিফের নির্ধারিত সীমানা অনুযায়ী পঞ্চগড় জেলার তিনদিকে প্রায় ১৮০ মাইল বা ২৮৮ কি.মি. জুড়ে ভারতের সীমান্ত অবস্থিত।
পঞ্চগড় জেলায় মোট পাঁচটি উপজেলা
আটোয়ারী,
তেতুলিয়া,
দেবীগঞ্জ,
পঞ্চগড় সদর ও
বোদা উপজেলা।
বিখ্যাত স্থান:-
ভিতরগড়
মহারাজার দীঘি
বদেশ্বরী মহাপীঠ মন্দির
সমতলভূমিতে সম্প্রতি প্রতিষ্ঠিত চা-বাগান
মির্জাপুর শাহী মসজিদ
বার আউলিয়ার মাজার
গোলকধাম মন্দির
তেঁতুলিয়া ডাকবাংলো
তেঁতুলিয়া পিকনিক কর্নার
বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট ও বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর
রকস্ মিউজিয়াম
ভিতরগড় দুর্গনগরী
কিভাবে যাবেন:-
সড়ক পথে ঢাকা হতে পঞ্চগড়ের দূরত্ব ৪৯৪ কিলোমিটার এবং রেলপথে ঢাকা হতে পঞ্চগড় রেল স্টেশনের দূরত্ব ৬৮০ কিলোমিটার। ঢাকার গাবতলী, মহাখালী, সায়েদাবাদ, শ্যামলী, কল্যানপুর, কলাবাগান, ফকিরাপুল, আসাদগেট – প্রভৃতি বাস স্টেশন থেকে পঞ্চগড় আসার সরাসরি দুরপাল্লার এসি ও নন-এসি বাস সার্ভিস আছে; এগুলোতে সময় লাগে ৭.৩০ হতে ১০ ঘন্টা।
ঢাকার কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে পঞ্চগড়ে আসার সরাসরি কোনো ট্রেন নেই; ট্রেনে করে ঢাকা থেকে শান্তাহার, বা পার্বতীপুর বা দিনাজপুর এসে সেখান থেকে পঞ্চগড় আসতে হয়। কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে প্রতিদিন একাধিক ট্রেন দিনাজপুরে ও শান্তাহারের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।
পঞ্চগড়ে বিমানবন্দর না-থাকায় এখানে সরাসরি আকাশ পথে আসা যায় না, তবে ঢাকা থেকে সরাসরি বিমান যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে সৈয়দপুর বিমানবন্দরের সাথে; ঢাকা থেকে সৈয়দপুর এসে সেখান থেকে সড়কপথে পঞ্চগড়ে আসা যায়।