ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি কুমিল্লার ময়নামতিতে অবস্থিত একটি কমনওয়েলথ যুদ্ধ সমাধি। এখানে গাছের নির্মল ছায়ায় ঘুমিয়ে আছেন শত্রু-মিত্র, তারা আবার একেকজন একেক ধর্মে বিশ্বাসী। এখানে ৭৩৬ জন যোদ্ধার কবর রয়েছে। ১৯৪১-১৯৪৫ সালে বার্মায় সংঘটিত যুদ্ধে প্রাণ হারান ৪৫ হাজার কমনওয়েলথ সৈনিক। তাদের স্মৃতি রক্ষার্থে মিয়ানমার, আসাম এবং বাংলাদেশের ৯টি রণসমাধিক্ষেত্র তৈরি করা হয়েছিল। প্রতি বছর প্রচুর দর্শনার্থী নিহত সৈন্যদের প্রতি সম্মান জানাতে সমাধিক্ষেত্রে আসেন।
ময়নামতি রণ সমাধিক্ষেত্র মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে (১৯৩৯-১৯৪৫) নিহত ভারতীয় (তৎকালীন) ও বৃটিশ সৈন্যদের কবরস্থান। এটি ১৯৪৩-১৯৪৪ সালে তৈরি হয়েছে। কুমিল্লা শহর থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের খুব কাছেই এই যুদ্ধ সমাধির অবস্থান। এই সমাধিক্ষেত্রটি Commonwealth War Graves Commission (CWGC) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ও তারাই এই সমাধিক্ষেত্র পরিচালনা করেন। প্রতি বছর নভেম্বর মাসে সকল ধর্মের ধর্মগুরুদের সমন্বয়ে এখানে একটি বার্ষিক প্রার্থণাসভা অনুষ্ঠিত হয়।
ময়নামতি তখনকার সময়ে একটি ক্ষুদ্র গ্রাম হলেও তৎকালিন সেনাবাহিনীর একটি বড় ঘাঁটিতে পরিনত হয়। এখানে স্থাপিত হয় বড় একটি হাসপাতাল। এছাড়া কুমিল্লা ছিল যুদ্ধ-সরঞ্জাম সরবরাহের ক্ষেত্র, বিমান ঘাঁটি, আর ১৯৪৪ সালে ইম্ফলে স্থানান্তরিত হবার আগে চতুর্দশ সেনাবাহিনীর সদরদপ্তর। এই সমাধিক্ষেত্রের ৭৩৬টি কবর আছে। এর মধ্যে অধিকাংশ হলেন সেসময়কার হাসপাতালের মৃত সৈনিকরা। তাছাড়াও যুদ্ধের পর বিভিন্ন স্থান থেকে কিছু লাশ স্থানান্তর করেও এখানে সমাহিত করা হয়। বাহিনী অনুযায়ী এখানে এর মধ্যে রয়েছেন ৩জন নাবিক, ৫৬৭জন সৈনিক এবং ১৬৬জন বৈমানিক।[১] সর্বমোট ৭২৩ জন নিহতের পরিচয় জানা সম্ভব হয়েছিল। যুদ্ধে নিহত ব্যক্তিগণ যেসকল দেশের বাহিনীতে কর্মরত ছিলেন।
সৈন্যদের ধর্ম অনুযায়ী তাদের কবর ফলকে নাম, মৃত্যু তারিখ, পদবির পাশাপাশি ধর্মীয় প্রতীক রয়েছে। প্রশস্ত পথ ধরে সোজা সামনে রয়েছে সিঁড়ি দেওয়া বেদি, তার ওপরে শোভা পাচ্ছে খ্রিস্টধর্মীয় প্রতীক ক্রুশ। বেদির দুই পাশে রয়েছে আরও দুটি তোরণ ঘর। এসব তোরণ ঘর দিয়ে সমাধিক্ষেত্রের পেছন দিকের অংশে যাওয়া যায়। সেখানেও রয়েছে আরও বহু কবর ফলক। প্রতি দুটি কবর ফলকের মাঝখানে একটি করে ফুলগাছ রয়েছে। এ ছাড়া পুরো সমাধিক্ষেত্রেই রয়েছে অনেক গাছ। যখন কৃষ্ণচূড়া তার ডালপালা লাল করে দাঁড়িয়ে থাকে তখন চোখ ফেরানো যায় না। ঝিরঝিরে হাওয়ায় লাল ফুল পড়তে থাকে সমাধির গায়ে, এ এক অন্যরকম দৃশ্য।
কিভাবে যাবেনঃ-
ঢাকা থেকে সরাসরি বাস যোগে কুমিল্লা আসা যায়। সেখান থেকে রিক্সা করে ময়নামতি রণ সমাধিক্ষেত্র পৌঁছানো যায়।