বাংলার ইতিহাস অনেক পুরানো। এই অতি দীর্ঘ ইতিহাসের অনেক চরিত্রই বিশেষ ভাবে নজর কাটে। রাজা হরিশ চন্দ্র তেমনি একজন। তার কাহিনি সত্য যুগের। তিনি তার স্যততার জন্য লোক মুখে বিখ্যাত। নীলফামারী জেলাতে রাজা হরিশ চন্দ্রের স্মৃতিবিজড়িত স্থান রয়েছে। যার নাম হরিশচন্দ্র পাঠ।
জায়গাটি দেখলে মনে হয় এটি একটি উঁচু ঢিপি। শতবছর পূর্বের এই মাটির ঢিপিটি ৫০-৬০ ফুট উঁচু ছিল। কিন্তু কালের পরিক্রমায় নিচু হয়ে যাচ্ছে এটি। বর্তমানে ১০ ফুট উঁচুতে এটির অবস্থান। আর এই উঁচু জায়গাটিতে নির্মাণাধীন রয়েছে একটি শিবমন্দির। এ মন্দিরটি স্থাপন করেছেন রাজা হরিশচন্দ্র পাঠ। রাজা হরিশচন্দ্র মন্দিরের কাজ সমাপ্ত করতে পারেনি। তবে অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার লক্ষ্যে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
ব্রিটিশ সরকারের আমলে এটি খননের বন্দোবস্ত করা হয়। খননের কাজে ১২৫ ব্যক্তিকে নিয়োগও দেওয়া হয়। যাদের মধ্যে ছিলেন দেশি-বিদেশি বিজ্ঞানী, পাইলট, সেনাবাহিনী, পুলিশ ও মিডিয়া। খননের ৩য় দিনে একটি দরজার মুখ দেখতে পেয়ে খুশিতে সবাই আত্মহারা হয়। পরে দরজা দিয়ে ৮ জন ভেতরে প্রবেশ করলে সঙ্গে সঙ্গে দরজার মুখ বন্ধ হয়ে যায়। পরদিন শ্রমিকরা বিদায় নিয়ে চলে যায় হরিশচন্দ্র পাঠ থেকে। মন্দির উঁচু থাকা অবস্থায় এখানে বিষ্ণুমূর্তিসহ অসংখ্য মূর্তি ছিল। কিন্তু এ সমস্ত মূর্তি চুরি করে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। বর্তমানে বছরে ৩টি উত্সব এখানে বেশ ধুমধাম করে পালিত হয়। স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়গুলো এ উত্সব পালন করে রাজা হরিশচন্দ্র পাঠ ও ভগবানের আশ্বস্থ কামনা করেন।
এছাড়া সেসময় রাজা হরিশচন্দ্রের নামে গ্রামেরও নামকরণ হয়। রাজা হরিশচন্দ্র দানবীর হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এই জনপদে তাকে নিয়ে যাত্রাপালা, পালাগান রচিত হয়েছে। কথিত আছে রাজা হরিশচন্দ্রের কন্যা অধুনার সাথে রাজা গোপী চন্দ্রের বিয়ে হয়। তত্কালীন প্রথা অনুসারে গোপী চন্দ্র দান হিসেবে তার ছোট শ্যালিকা পদুনাকেও পান। এ নিয়েও অনেক গল্প প্রচলিত আছে। হরিশচন্দ্র পাঠ গ্রামে অনেক প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ আজও তার স্মৃতি বহন করছে।
কিভাবে যাবেন:
ঢাকার গাবতলী বা সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে নীলফামারী জেলা যাওয়ার জন্য এসি ননএসি বাস পাওয়া যায়। বাস সার্ভিসগুলোর মটর যান ও সেবার মান অনুযায়ী ভাড়া বিভিন্ন রকম: নরমাল হলে ৩০০-৪৫০ টাকা, চেয়ার কোচ হলে ৪৫০-৫৫০ টাকা, এবং এসি কোচ হলে ৫০০-১০০০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া বিআরটিসি বাসে করে ঢাকা, রাজশাহী, বগুড়া বা রংপুর হতে আসা যায়।
নীলফামারী জেলার অন্তর্গত সৈয়দপুর পৌরসভায় সৈয়দপুর বিমানবন্দর রয়েছে। শুধুমাত্র অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচলের জন্য ব্যবহৃত এই বিমানবন্দরের সাথে দেশের অন্যান্য বিমানবন্দরের দৈনিক একাধিক সরাসরি ফ্লাইট বিদ্যমান।
নীলফামারী শহর থেকে সড়কপথে জলঢাকা উপজেলার খুটামারা ইউনিয়নের হরিশচন্দ্র পাঠে যাওয়া যায়।