রাজবাড়ি মানেই ইতিহাস, রাজবাড়ি মানেই ঐতিহ্য। প্রতিটি রাজবাড়ির সাথে উক্ত রাজবাড়ির সময়ের শ্বাসক কিংবা সেই সময়ের তথ্য পাওয়া যায়। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি জেলাতেই রাজবাড়ি রয়েছে। নীলফামারী জেলার তেমনি একটি ঐতিহ্যবাহী রাজবাড়ি হল ধর্মপালের রাজবাড়ি।
লোকমুখে এ গড়ের ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায় যে, পাল বংশের রাজা ধর্মপাল এখানে বাস করতেন। এখান হতে তিনি রাজ্য পরিচালনা করতেন। এটা ছিল তার রাজপ্রাসাদ। তারই নামানুসারে এ এলাকার নাম হয়েছে ধর্মপাল। এখানকার মানুষের ধারণা প্রায় ৫০০ কিংবা হাজার বছর আগে এ স্থাপনা নির্মাণ হয়েছিল। ঐতিহাসিকভাবে এ লোক কথার সত্যতা মেলা ভার। কথিত রয়েছে, গড় ধর্মপালের পূর্বদিকে একটি ছোটনদীর তীরে ধর্মপালের রাজ প্রাসাদ ছিল। ধর্মপালের গড় থেকে ১/২ মাইল উত্তর পশ্চিমে একটি মজে যাওয়া জলাশয় রয়েছে। যার পূর্বপাড়ে বাধানো ঘাট ও একটি উচুঁ মাটির ঢিবি এবং ঢিবির ভিতরের প্রাচীরের ইট দেখে অনেকে এটাকে ধর্মপালের রাজবাড়ি মনে করে থাকেন। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা এর প্রকৃত ইতিহাস বলতে পারছেন না।
ঐতিহাসিক সত্যতা অনুযায়ী প্রাচীন বাংলা যে কয়টি ভাগে ভাগ ছিল তারই কামরূপ অংশের একটি অঞ্চল হল নীলফামারী জেলা। বাংলার কামরূপ অঞ্চল কখনও পাল বংশের শাসনাধীন ছিল না। সে সূত্রে এ ঐতিহাসিক স্থাপনা পাল রাজা ধর্মপালের কিনা তা আজ প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। যদি পাল বংশের স্থাপনা হয় তবে এ স্থাপনার বয়স হবে প্রায় হাজার বছর। কেননা বাংলায় পাল বংশের সমাপ্তি ঘটে ১১৫৮ খি.। আবার কিছু কিছু ঐতিহাসিক মনে করেন। পাল বংশের শেষ দিকের রাজা হর্ষবর্ধন দেবের ছেলে ধর্মপাল হয়তো এ অঞ্চল দখলে নিতে যুদ্ধ বিগ্রহ করতে এসে এখানে দুর্গ গড়ে তুলেছেন। কেননা এ গড়ের অদুরেই রয়েছে ধর্মপাল এর শ্যালিকা ময়নামতির নামে ময়নামতির গড়। যদি এসব তথ্যর ঐতিহাসিক সত্যতা মেলে তাহলে এ স্থাপনা দশম কিংবা একাদশতম শতাব্দীতে তৈরি হয়েছে।
এ অঞ্চলটি ঐতিহাসিকভাবে একটি গুরত্বপূর্ণ এলাকা। এ গড়ের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ঐতিহাসিক নদী গুপ্তবাসী। এ নদীর এক তীরে ধর্মপাল গড় আর অপরতীরে বিখ্যাত সুফী সাধক গোড়ক কামাল পীর সাহেবের মাজার। এ অঞ্চলটি প্রাচীনকাল হতে একটি সুখী সমুদ্ধ অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী একটি অঞ্চল হিসাবে পরিচিত ছিল। তিস্তা, করতোয়া, দেওনাই, গুপ্তবাসী বিধৌত এ এলাকাটি তার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সুবিদিত সুখ্যাতির কারণে প্রাচীন রাজা বাদশাদের সৈন্য দৃষ্টির মধ্যেই ছিল। এ কারণেই এ অঞ্চলটিকে দখলে নিতে যে যার সুবিধামত প্রায়শই এ এলাকায় যুদ্ধ বিগ্রহ লাগাতো। প্রাচীন বাংলার সে ঐতিহাসিক মূল্য থেকে এ গড়টিকে একটি দুর্গ নগরী হিসাবে মনে করছে ইতিহাস বিদগন। খননকারী দলের মতে, ঐতিহাসিকভাবে যেহেতু এ অঞ্চল কামুরপ অঞ্চলে অবস্থিত। আর কামরূপ অঞ্চল কখনও পাল শাসনাধীনে ছিল না, সে হিসাবে এ স্থাপনা পাল বংশের হওয়া নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তবে স্থাপত্য দেখে মনে হচ্ছে এ গড়ে কখনও দীর্ঘ সময়ে কেউ ছিল না।
যেভাবে যাবেনঃ-
জলঢাকা উপজেলার গড় ধর্মপালের র্পর্বদিকে একটি ছোট নদীর তীরে ধর্মপালের রাজ বাড়ী অবস্থিত। নীলফামারী শহর থেকে সড়কপথে ধর্মপালের রাজ বাড়ী যাওয়া যায়।