চাঁপাইনবাবগঞ্জ ঐতিহাসিক নিদর্শন ও প্রতণসম্পদে সমৃদ্ধ একটি জেলা। প্রাচীন বাংলার রাজধানী গৌড়ের রাজধানী হিসেবে শিবগঞ্জ উপজেলায় বিভিন্ন ধরনের ঐতিহাসিক স্থাপনা ও দর্শনীয় নিদর্শন হিন্দু শাসন আমলে বিশেষ করে সেন বংশের শেষ রাজাদের খননকৃত দিঘী ও সুলতানী আমলে মুসলিম সুলতানদের নির্মিত মসজিদই এ উপজেলার প্রধান ঐতিহাসিক স্থাপনা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বিশেষ কিছু স্থাপনার মধ্যে অন্যতম হল দারসবাড়ী মসজিদ। এখানে একটি মাদ্রাসা রয়েছে।
স্থলবন্দর ও ছোট সোনামসজিদের মধ্যবর্তী শিবগঞ্জ উপজেলার ওমরপুর নামক জায়গার পাশে দারসবাড়ি মসজিদ ও মাদ্রাসা। একটি আরবি শিলালিপি অনুসারে ৮৮৪ হিজরি অনুযায়ী ১৪৭৯ সালে সুলতান শামসউদ্দিন ইউসুফ শাহের রাজত্বকালে তারই নির্দেশে মসজিদটি নির্মিত হয়।
ইট নির্মিত এই মসজিদের অভ্যন্তরের আয়তক্ষেত্র দুই অংশে বিভক্ত। এর আয়তন ৯৯ ফুট ৫ ইঞ্চি, ৩৪ ফুট ৯ ইঞ্চি। পূর্ব পার্শ্বে একটি বারান্দা, যা ১০ ফুট ৭ ইঞ্চি। বারান্দার খিলানে ৭টি প্রস্ত্তর স্তম্ভের উপরের ৬টি ক্ষুদ্রাকৃতি গম্বুজ এবং মধ্যবর্তীটি অপেক্ষাকৃত বড় ছিল। উপরে ৯টি গম্বুজের চিহ্নাবশেষ রয়েছে উত্তর-দক্ষিণে ৩টি করে জানালা ছিল। উত্তর পশ্চিম কোণে মহিলাদের নামাজের জন্য প্রস্তর স্তম্ভের উপরে একটি ছাদ ছিল। এর পরিচয় স্বরূপ এখনও একটি মেহরাব রয়েছে। এতদ্ব্যতীত পশ্চিম দেয়ালে পাশাপাশি ৩টি করে ৯টি কারুকার্য খচিত মেহরাব বর্তমান রয়েছে। এই মসজিদের চারপার্শ্বে দেয়াল ও কয়েকটি প্রস্তর স্তম্ভের মূলদেশ ব্যতীত আর কিছুই অবশিষ্ট নেই । এ মসজিদটিও বাংলার প্রথম যুগের মুসলিম স্থাপত্যের কীর্তির একটি উল্লেখযোগ্য নিদর্শন। এখানে প্রাপ্ত তোগরা অক্ষরে উৎকীর্ণ ইউসুফি শাহী লিপিটি এখন কোলকাতা যাদুঘরে রক্ষিত আছে। জেনারেল ক্যানিংহাম তার নিজের ভাষাতে একে দারসবাড়ী বা কলেজ বলেছেন। এ ঐতিহাসিক কীর্তির মাত্র কয়েকগজ দূরে ভারতীয় সীমান্ত।
মসজিদের পূর্বে ছোট দীঘির পাশেই বিশাল এলাকাজুড়ে রয়েছে দারসবাড়ি মাদ্রাসা। আরবি ‘দারস’ শব্দের অর্থ পাঠ বা অধ্যয়ন। জেনারেল কানিংহাম এটিকে শিক্ষাকেন্দ্র (কলেজ) বলে উল্লেখ করেছেন। ধারণা করা হয়, ১৫ শতকে সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহর আমলে নির্মিত এই মাদ্রাসা বাংলাদেশের মুসলমানদের শিক্ষাকেন্দ্রের নিদর্শন। একসময় মাদ্রাসাটিতে বর্তমানের বিশ্ববিদ্যালয় মানের শিক্ষা দেওয়া হতো। এখানে নদিয়া, পশ্চিম দিনাজপুর, মালদহ, দেশের উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গের লোকজন উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করত। ৩০০ শিক্ষক পাঠদান করতেন বলে জানা যায়।
যেভাবে যাবেনঃ-
ঢাকা থেকে সরাসরি বাস কিংবা ট্রেইনে চেপে সরাসরি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরে পৌঁছানো যায়। চাঁপাইনবাবগঞ্জে পৌঁছে আপনি এখানে বাস অথবা সিএনজি অটোরিকশায় আসতে পারেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে প্রায় ৩৫ কি.মি.। বাস অথবা সিএনজি-তে যাওয়া যায়। প্রায় ৪৫ মি. থেকে ১ ঘন্টা সময় লাগে।