বান্দরবান জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত চট্টগ্রাম বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। এটি বাংলাদেশের অন্যতম একটি পার্বত্য জেলা। বান্দরবান জেলার মোট আয়তন ৪৪৭৯.০৩ বর্গ কিলোমিটার। বান্দরবান জেলা ৭টি উপজেলা, ৭টি থানা, ২টি পৌরসভা, ৩৩টি ইউনিয়ন, ৯৬টি মৌজা, ১৪৮২টি গ্রাম ও ১টি সংসদীয় আসন নিয়ে গঠিত। এখানে জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে প্রায় ৯০ জন। মোট জনসংখ্যার ৪৯.৩৩% মুসলিম, ৩.৬২% হিন্দু, ৩৪.৮৮% বৌদ্ধ এবং ১২.১৭% খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী। তাছাড়া এ জেলায় মারমা, চাকমা, বম, মুরং, ত্রিপুরা, খেয়াং, খুমি, লুসাই প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।
অবস্থান ও সীমানা:
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাংশে ২১°১১´ থেকে ২২°২২´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯২°০৪´ থেকে ৯২°৪১´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ জুড়ে বান্দরবান জেলার অবস্থান। রাজধানী ঢাকা থেকে এ জেলার দূরত্ব প্রায় ৩২৫ কিলোমিটার এবং চট্টগ্রাম বিভাগীয় সদর থেকে প্রায় ৭৫ কিলোমিটার। এ জেলার পশ্চিমে কক্সবাজার জেলা ও চট্টগ্রাম জেলা, উত্তরে রাঙ্গামাটি জেলা, পূর্বে রাঙ্গামাটি জেলা ও মায়ানমারের চিন প্রদেশ এবং দক্ষিণে ও পশ্চিমে মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশ অবস্থিত।
ইতিহাস এবং ঐতিহ্যঃ
বান্দরবান পার্বত্য চট্টগ্রামের অংশ। এই অঞ্চলটি ১৫৫০ সালের দিকে প্রণীত বাংলার প্রথম মানচিত্রে বিদ্যমান ছিল। তবে এর প্রায় ৬০০ বছর আগে ৯৫৩ সালে আরাকানের রাজা এই অঞ্চল অধিকার করেন। ১২৪০ সালের দিকে ত্রিপুরার রাজা এই এলাকা দখল করেন। ১৪০০ শতকের দিকে চাকমা রাজা এই অঞ্চল দখল করেন। ১৫৭৫ সালে আরাকানের রাজা এই অঞ্চল আক্রমণ করে কিছু এলাকা পুনর্দখল করেন, এবং ১৬৬৬ সাল পর্যন্ত অধিকারে রাখেন। মুঘল সাম্রাজ্য ১৬৬৬ থেকে ১৭৬০ সাল পর্যন্ত এলাকাটি সুবা বাংলার অধীনে শাসন করে। ১৭৬০ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এই এলাকা নিজেদের আয়ত্তে আনে। ১৮৬০ সালে এটি ব্রিটিশ ভারতের অংশ হিসাবে যুক্ত হয়। ব্রিটিশরা এই এলাকার নাম দেয় চিটাগাং হিল ট্র্যাক্টস বা পার্বত্য চট্টগ্রাম। এটি চট্টগ্রাম জেলার অংশ হিসাবে বাংলা প্রদেশের অন্তর্গত ছিল। মূলত চিটাগাং হিল ট্র্যাক্টস রেগুলাসন ১৯০০ দ্বারা এই অঞ্চল আনুষ্ঠানিকভাবে আরাকান রাজ্যের অংশ থেকে তৎকালীন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের আওতায় আসে এবং চাকমা সার্কেল, মং সার্কেল ও বোমাং সার্কেল প্রতিষ্ঠিত হয় এবং প্রত্যেক সার্কেলে সার্কেল চীফ বা রাজা নিযুক্ত করা হয়। বান্দরবান জেলা ছিল বোমাং সার্কেলের অন্তর্ভুক্ত। বোমাং রাজ পরিবার ১৬ শতক থেকেই এই অঞ্চল শাসন করছিল। তাই এ জেলার আদি নাম বোমাং থং।
যোগাযোগ ব্যবস্থা:
বান্দরবান জেলায় যোগাযোগের প্রধান দুইটি সড়ক চট্টগ্রাম-বান্দরবান মহাসড়ক এবং চন্দ্রঘোনা-বান্দরবান সড়ক। সব ধরণের যানবাহনে যোগাযোগ করা যায়।এছাড়া জেলার আভ্যন্তরীণ সংযোগ সড়কগুলো হল চিম্বুক-রুমা, বান্দরবান-রোয়াংছড়ি-রুমা, আজিজনগর-গজালিয়া-লামা, খানহাট-ধোপাছড়ি-বান্দরবান, বান্দরবান-চিম্বুক-থানচি-আলীকদম-বাইশারী-ঘুমধুম এবং চিম্বুক-টংকাবতী-বার আউলিয়া। প্রধান যোগাযোগ মাধ্যম সিএনজি চালিত অটোরিক্সা।
ভাষা ও সংস্কৃতি:
সরকারি ভাষা হিসেবে বাংলা প্রচলিত। স্থানীয় বাঙ্গালিরা চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে। এছাড়াও অন্যান্য ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ভাষা হিসেবে মারমা, ম্রো, ত্রিপুরা, বম, লুসাই, চাকমা, তঞ্চঙ্গ্যা, চাক, খেয়াং, খুমী, পাংখুয়া ইত্যাদি প্রচলিত।
বান্দরবানের মারমাদের বর্ষবরণ উৎসবের নাম সাংগ্রাই। এছাড়া বড় উৎসবের মধ্যে রয়েছে ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে বা প্রবারণা পূর্ণিমা, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা, দূর্গা পূজা ইত্যাদি ধর্মীয় উৎসব।
দর্শনীয় স্থান:
১)তাজিংডং (১২৮০ মিটার), জাতীয়ভাবে স্বীকৃত বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ।
২)সাকা হাফং (১০৫২ মিটার)
৩)কেওক্রাডং (৮৮৩ মিটার), জাতীয়ভাবে স্বীকৃত বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ।
৪)রাইখিয়াং খাল, বাংলাদেশের দীর্ঘতম খাল।
৫)নীলাচল
৬)নীলগিরি
৭)মেঘলা
৮)নাফাখুম জলপ্রপাত, বাংলাদেশের বৃহত্তম জলপ্রপাত।
৯)সাফাখুম জলপ্রপাত
১০)আমিয়াখুম জলপ্রপাত
১১)সাতভাইখুম জলপ্রপাত
১২)বগা লেক
১৩)জাদিপাই ঝর্না
১৪)বুদ্ধ ধাতু জাদি
১৫)ডাবল ফলস
১৬)আলীকদম গুহা
১৭)চিম্বুক পাহাড় ও উপজাতীয় গ্রাম
১৮)রেমাক্রী
১৯)শৈলপ্রপাত
২০)রাজবিহার এবং উজানিপাড়া বিহার
২১)প্রান্তিক লেক
২২)জীবননগর
২৩)কিয়াচলং লেক
২৪)চিংড়ি ঝর্ণা
যেভাবে যাবেন:
রাজধানী ঢাকার সায়দাবাদ, কলাবাগান, আব্দুল্লাহপুর,কমলাপুর, আরামবাগ, ফকিরাপুল সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে বান্দরবানের বাস পেয়ে যাবেন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বাস যাতায়াত করে বান্দরবান ঢাকা রুটে। নন এসি বাসের ভাড়া ৬২০ টাকা ।
বান্দরবানের প্রতিটি জায়গায় যেতে চান্দের গাড়ির প্রয়োজন হয়। বান্দরবানের চান্দের গাড়ির ভাড়া কমবেশী ৬০০০-৬৫০০ টাকার মাঝে পাওয়া যায়। এছাড়াও বাসেও যাতায়াত করা যায়।