নরডিক দূতাবাস উদ্বোধন মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হতে সহযোগিতা করবে ডেনমার্ক

590

বাংলাদেশকে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত করতে সব ধরনের সহযোগিতা দেবে ডেনমার্ক। এছাড়া এদেশের পোশাক শিল্প খাতের কর্মপরিবেশের অনেক অগ্রগতি হয়েছে। তবে এই অগ্রগতি ধরে রাখতে হবে। ঢাকায় সফররত ডেনমার্কের কর্মসংস্থানমন্ত্রী জন নিরগার্ড লারসেন মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন। এদিকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানে নরওয়ে, ডেনমার্ক ও সুইডেনের যৌথ উদ্যোগে নরডিক দূতাবাস উদ্বোধন করা হয়েছে।

বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ ও নরডিক দূতাবাস উদ্বোধন উপলক্ষে ঢাকায় এসেছেন ডেনমার্কের কর্মপরিবেশ মন্ত্রী জন নিরগার্ড লারসেন। ঢাকায় এসে বিভিন্ন পোশাক কারখানা পরিদর্শন করেন। এছাড়া শ্রম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ঢাকা সফরকালে পোশাক শিল্প খাতের শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা উন্নয়নে বাংলাদেশ ও ডেনমার্কের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।

বাংলাদেশের পোশাক শিল্প নিয়ে ডেনমার্ক সরকারের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরতে মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ঢাকার ডেনমার্ক দূতাবাস। এ সময় ডেনমার্কের কর্মসংস্থানমন্ত্রী জন নিরগার্ড, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক, ঢাকায় নিযুক্ত ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত হেন ফাগুল এসকঞ্জার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে ডেনমার্কের কর্মসংস্থানমন্ত্রী জন নিরগার্ড লারসেন বলেন, বাংলাদেশ ও ডেনমার্কের মধ্যে অত্যন্ত সুসম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশের দিকে ধাবিত হচ্ছে। বাংলাদেশকে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত করতে সব ধরনের সহায়তা দেবে ডেনমার্ক।

পোশাক শিল্প খাতের কর্মপরিবেশের অগ্রগতি হয়েছে বলে উল্লেখ করে ডেনমার্কের কর্মসংস্থানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের পোশাক শিল্প খাতের কর্মপরিবেশের যে অগ্রগতি হয়েছে, সেটা ধরে রাখতে হবে। তবে এখনও আরও ভাল করার সুযোগ রয়েছে। ডেনমার্ক সরকার এ খাতে যে কোন সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছে বলে তিনি জানান।

জন নিরগার্ড বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক ডেনমার্কের বাজারে বিক্রি হয়। এখান থেকে ডেনমার্কের রফতানি হয়, এমন একটি পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ আমি পর্যবেক্ষণ করেছি। শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যের বিষয়ে তারা কি ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, সেটাও আমি পর্যবেক্ষণ করেছি। এতে আমি সন্তুষ্ট হয়েছি।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় পোশাক শিল্প খাতের শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা উন্নয়নে বাংলাদেশ ও ডেনমার্কের মধ্যে একটি প্রকল্প সই হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন পোশাক কারখানা পরিদর্শন কার্যক্রম আরও শক্তিশালী করা হবে। শ্রমিকদের নিরাপত্তা বাড়ানোর লক্ষ্যে সচেতন করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে শ্রম ও কর্মসংস্থানমন্ত্রী মুজিবুল হক বলেন, বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের কর্মপরিবেশ উন্নয়নে ডেনমার্ক সরকার অতীতে সহযোগিতা করেছে। এখনও সহযোগিতা করতে চায়। পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ে ডেনমার্ক সরকারের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এই সমঝোতা স্মারক সইয়ের ফলে শ্রমিকদের পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার উন্নয়ন হবে। একই সঙ্গে পরিদর্শকদের কর্মদক্ষতাও বৃদ্ধি পাবে।

শ্রম প্রতিমন্ত্রী জানান, ডেনমার্ক সরকারের সঙ্গে যে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে তার আওতায় পোশাক কারখানার দুর্ঘটনা প্রতিরোধ, অবকাঠামো নিরাপত্তা, মেশিনের নিরাপত্তা, রসায়নগত নিরাপত্তা ইত্যাদি বিষয়ে সহযোগিতা জোরদার করা হবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে রানা প্লাজা দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবে আমি দায়িত্ব নিয়ে বলতে চাই, এদেশে রানা প্লাজার মতো দুর্ঘটনা আর কখনই ঘটবে না। কেননা আমরা প্রতিনিয়ত কারখানা পরিদর্শন করছি। ইতোমধ্যেই তিন হাজার ৬৬০টি পোশাক কারখানার নিরাপত্তা ঝুঁকি পরীক্ষা করেছি। এর মধ্যে ৩৭টি পোশাক কারখানা সম্পূর্ণ বন্ধ ও ৪২টি পোশাক কারখানা আংশিক বন্ধ করা হয়েছে। তিনি এ সময় ডেনমার্কের মন্ত্রীর কাছে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের মূল্য বাড়ানোর জন্য আহ্বান জানান।

বাংলাদেশের কারখানা পরিদর্শকদের জন্য ডেনমার্ক সরকার ২০০টি ট্যাব দিয়েছে। এসব ট্যাব ব্যবহারের মাধ্যমে পরিদর্শন কার্যক্রমে গতিশীলতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ডেনমার্কের কর্মসংস্থানমন্ত্রী নিরগার্ড সরকারী কল-কারখানা পরিদর্শন অধিদফতরের প্রধান পরিদর্শক সৈয়দ আহমেদের কাছে এসব ট্যাব হস্তান্তর করেন।

 

ঢাকায় নরডিক দূতাবাস উদ্বোধন ॥ নরওয়ে, ডেনমার্ক ও সুইডেন ঢাকায় যৌথভাবে নরডিক দূতাবাস চালু করেছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানের বেজ এজওয়াটার ভবনে তিন দেশের যৌথ দূতাবাসের উদ্বোধন করা হয়।

 

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, ডেনমার্কের কর্মসংস্থানমন্ত্রী জন নিরগার্ড, নরওয়ের বাণিজ্য, শিল্প ও মৎস্য প্রতিমন্ত্রী দাইলেক আয়হান ও ঢাকায় নিযুক্ত দেশ তিনটির রাষ্ট্রদূতরা উপস্থিত ছিলেন।বিভিন্ন দেশে নরওয়ে, ডেনমার্ক ও সুইডেন যৌথ দূতাবাস ইতোমধ্যেই চালু করেছে। সেখানে তিনটি দেশ একটি ভবন থেকেই তাদের কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। বাংলাদেশেও একটি ভবন থেকেই এই তিন দেশের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

সূত্র জানায়, নরওয়ে, ডেনমার্ক ও সুইডেন তিনটি দেশই বাংলাদেশকে বিভিন্ন প্রকল্পে সহায়তা দিয়ে আসছে। তিনটি দেশই বাংলাদেশে তাদের সহায়তা বাড়ানোর জন্য ইতোমধ্যেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বাংলাদেশকে আরও সমৃদ্ধ করার প্রচেষ্টায় তারা পাশে থাকবে বলে জানিয়েছে। এখন একযোগে তিন দেশের কাজ আরও সহজে পরিচালিত করার লক্ষ্যে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তিন দেশ যৌথভাবে দূতাবাস চালু করায় বাংলাদেশী নাগরিকদের আরও সহজে সেবা চালু দেয়া সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন তিন দেশের কূটনীতিকরা।

ইতোমধ্যেই ঢাকায় ফ্রান্স ও জার্মানি একযোগে ফ্রাংকো-জার্মান দূতাবাস তৈরি করেছে। এই দেশ দুইটি এখন রাজধানীর একটি ভবন থেকেই দূতাবাসের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এখন নরডিক দূতাবাস চালু করা হয়েছে। তবে নরডিক দূতাবাসের জন্য নতুন করে কোন দূতাবাস ভবন তৈরি করেনি নরওয়ে, ডেনমার্ক ও সুইডেন। গুলশানের বেজ এজওয়াটার নামের একটি বহুতল ভবনে দূতাবাসের কাজ চলবে।