সুজাবাদের চর | ট্র্যাভেল নিউজ বাংলাদেশ

786

নদী মাত্রিক আমদের এই বাংলাদেশের অন্যতম একটি পরিচিত জেলা ঝালকাঠি। প্রাচীন কাল থেকেই নদি পথের কারনে এই জেলাটি সকলের নিকট আগ্রহের স্থান ছিল। নদী বন্দরের জন্য ঝালকাঠি সবসময় ইউরোপীয়দের আকর্ষণ করেছে। ফলে বিভিন্ন সময়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, ডাচ ও ফরাসিরা এখানে ব্যবসা কেন্দ্র খুলেছিল। বানিজ্যিক গুরুত্বের জন্য ঝালকাঠিকে দ্বিতীয় কলকাতা বলা হত। নদী মাত্রিক সুন্দর এই জেলাটির সুন্দর আরও বাড়িয়ে দিয়েছে সুজাবাদের চর।

দিনদিন ভ্রমণপিপাসুদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে নলছিটি’র সুজাবাদের চর। এখানে দেখার মত রয়েছে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান। এগুলোর মধ্যে রয়েছে সুগন্ধা নদীর মনোরম চর, শতবয়সী রেইনট্রি গাছ, সুজাবাগ কেল্লা, মল্লিকপুরের গাইবি মসজিদ, কবি কামিনী রায়ের নানাবাড়ী, চায়না কবর ও কাজী আলমগীরের বাংলো। তবে সুজাবাদ চরে আসার একমাত্র মাধ্যম ট্রলার বা নৌযোগ। নলছিটি উপজেলা শহর থেকে সহজেই নৌযোগে যে কেউ যেতে পারেন সুজাবাদের চরে। পিকনিক আয়োজনকারীরা ইচ্ছে করলে দু’তিন দিন আগে বুকিং দিয়ে বা যোগাযোগ করে সকল ব্যবস্থা আয়োজন করতে পারবেন। এজন্য স্থানীয় ভাবে সহযোগীতার জন্য রয়েছেন নলছিটি নাগরিক ফোরাম সহ স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক সদস্যরা।

সুস্বাদু রান্নার জন্য রয়েছে স্থানীয় নাম ডাকওয়ালা বার্বুচিরা। এদের মধ্যে রয়েছে হিরা বাবুর্চি, সেলিম বাবুর্চি, হারুন বাবুর্চি, মোচলেম বাবুর্চি অন্যতম। বিনোদনের জন্য স্থানীয় সংগীত শিল্পীদের রয়েছে আনাগোনা। কম বাজেটে মনোরম পরিবেশে এসব আয়োজন করার সম্ভব বলে নলছিটি নাগরিক ফোরামের সদস্য সচিব বেলায়েত হোসেন নান্নু ও নলছিটি পৌর ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক তরিকুল ইসলাম হিরন জানান।

সুজাবাদ চর থেকে ১০০ গজ দূরে গেলেই দেখতে পারবেন শতবয়সী রেইনট্রি গাছ। সেখানে দূর দুরান্ত থেকে হাজার হাজার ভ্রমণপিপাসুরা ছুটে আসেন। সেখান থেকে ১০০ গজ দুরে গেলেই দেখতে পারবেন সুজাবাদ কেল্লা। জানাযায়, মোঘল রাজপুত্র এবং বাংলার সুবেদার শাহ সুজা তার ভাই আওরাংগজেব এর রোশানল থেকে রক্ষা পেতে মোঘল সম্রাট শাহজাহানের পুত্র শাহজাদা সুজা ১৬৫৪ সালে সুজাবাদ গ্রামের পত্তন করেন এবং জলদস্যুদের দমন এবং তাদের আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য সুজাবাদ গ্রামে দু‘টি কেল্লা তৈরি করেন। কেল্লাদ্বয়ের একটি মাটি এবং অন্যটি ইট দ্বারা তৈরি। বর্তমানে দেখতে পারবেন ইতিহাসের সেই ধ্বংসপ্রায় কেল্লাটির অংশবিশেষ। যা বিলীনের পথে। সেই থেকেই সেই গ্রামের নামকরন সুজাবাদ গ্রাম।

সুজাবাদ চর থেকে নৌযোগে নলছিটি শহরের আসলেই দেখতে পারবেন ইতিহাসের স্বাক্ষী প্রাচীন আরেক মসজিদ। স্থানীয় ভাবে যা গায়েবী মসজিদ নামে পরিচিত। মল্লিকপুর গ্রামের রাস্তার পার্শে¦ এই মসজিদ। মসজিদটি কে বা কারা নির্মান করেছেন জানা না গেলেও অধিকাংশ মনে করছেন ৪ থেকে ৫শ বছরের পুরাতন।

সেখান থেকে একটু সামনে গেলেই দেখতে পারবেন চীনা কবর। সেখানেও রয়েছে অজানা অনেক ঘটনা। সেখান থেকে মাহেন্দা যোগে যেতে পারবেন সিদ্ধকাঠি কামীনি রায়ের নানা বাড়ি খ্যাত জমিদার বাড়ি।

এছাড়াও শহরের প্রাণকেন্দ্রে রয়েছে কাজী আলমগীরের বাংলো সেখানে গেলে দেখতে পাবেন হরিন, ময়ুর সহ বিভিন্ন প্রজাতির পশুপাখি। সকাল ১০ থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত সবার জন্য উম্মুক্ত। এসবের মাঝে তো রয়েছে প্রাকৃতির সৌন্দর্যে সাজানো সুগন্ধার তীর ঘেষা সুজাবাদ চর। সম্ভবনার এক নাম। পরিবার পরিজন বা পিকনিক আয়োজনের জন্য সহজেই ঘুরে যেতে পারেন নলছিটির সুজাবাদের চর।

কিভাবে যাবেনঃ-

নদ-নদী ও সমুদ্র বেষ্টিত এই জেলায় যাতায়াতের জন্য নৌ-পথই সবচেয়ে সহজ যোগাযোগ মাধ্যম। এছাড়া সড়ক পথেও এই জেলায় যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে। ঢাকা সদরঘাট নদী বন্দর লঞ্চ টার্মিনাল থেকে ঝালকাঠির উদ্দেশ্যে লঞ্চ ছেড়ে যায়। ঢাকা থেকে ঝলকাঠির উদ্দেশ্যে যেসব গাড়ি ছেড়ে যায় গুলিস্তান থেকে।