ভাই গিরিশ চন্দ্র সেনের বাস্তুভিটা

1329

ইসলাম ধর্মের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কুরআন- এর প্রথম বাংলা অনুবাদক গিরিশচন্দ্র সেন বর্তমান নরসিংদী জেলার পাঁচদোনা গ্রামে এক বিখ্যাত দেওয়ান বৈদ্যবংশে জন্মগ্রহণ করেন। গিরিশচন্দ্রের পিতা ছিলেন মাধবরাম সেন এবং পিতামহ ছিলেন রামমোহন সেন। ভাই গিরিশচন্দ্র সেনের পরিবার ছিল অত্যন্ত গোঁড়াপন্থি। পরিবারে সনাতন ধর্মের আচরণ প্রয়োজনের তুলনায় একটু বাড়াবাড়ি রকমভাবেই মেনে চলা হতো। এমন একটি কুসংস্কারাচ্ছন্ন পরিবারে জন্ম নিয়েও গিরিশচন্দ্র সেন একজন সম্পূর্ণ সংস্কার মুক্ত মানুষ হয়েছিলেন। অন্য ধর্মের উপর গবেষণা করে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। গিরিশ চন্দ্র সেন ছিলেন একজন সাহিত্যিক, গবেষক ও ভাষাবিদ। ভাই গিরিশচন্দ্র সেন নামে তিনি অধিক পরিচিত।

ভাই গিরিশচন্দ্র সেন ফার্সি ভাষায় গভীর জ্ঞান লাভ করেন এবং আরবি-ফার্সি সাহিত্যের ওপর পড়াশোনা করার জন্য কানপুর ও লখনউ গমন করেন। ফিরে আসার পর কেশবচন্দ্রের উৎসাহেই তিনি ইসলামি দর্শনের উপর গবেষণা শুরু করেন। কিন্তু ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে পড়াশোনা ও গবেষণা করার জন্য প্রধান বাঁধাই ছিল ভাষা। হিন্দু ও খ্রিস্ট ধর্মের ধর্মগ্রন্থসমূহ অনেক আগেই বাংলায় অনূদিত হয়েছিল, কিন্তু ইসলাম ধর্মের কোন ধর্মশাস্ত্রই বাংলাভাষায় ছিলনা।

বিশেষ করে পবিত্র কুরআন ও হাদিস তখনো বাংলায় প্রকাশিত হয়নি। যার ফলে কুরআনের মর্মার্থ অনুবাধন করা থেকে বৃহত্তর মুসলিম গোষ্ঠী পুরোপুরিই বঞ্চিত ছিল। তাই ব্রাহ্মসমাজের কেশবচন্দ্র সেন পরিচালিত নববিধান সভা ইসলাম ধর্মগ্রন্থসমূহ বাংলায় অনুবাদ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। স্বাভাবিকভাবেই, আরবি-ফার্সি ভাষার সুপন্ডিত ভাই গিরিশচন্দ্র সেন অত্যন্ত দক্ষতার সাথে এ দায়িত্বপূর্ণ কাজ সম্পন্ন করেন।

তিনি কুরআন শরীফের সম্পূর্ণ অংশ, মিশকাত শরীফের প্রায় অধিকাংশ, হাদিস, তাজকিরাতুল আউলিয়া, দিওয়ান-ই-হাফিজ, গুলিস্তাঁ, বুঁস্তা, মকতুব্বত-ই-মাকদুস, শারফ উদ্দিন মুনিবী, মসনভী-ই-রুমী, কিমিয়া-ই-সাদত, গুলশান-ই-আসরার ইত্যাদিসহ বহু ইসলামি গ্রন্থ বাংলায় অনুবাদ করেন।

ভাই গিরিশ চন্দ্র সেনের পৈতৃক বাড়ির এক সামান্য অংশের ধ্বংসাবশেষ সংরক্ষণ ও পুনরায়ণের মাধ্যমে গড়ে তোলা হয়েছে এই প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর। ভারতীয় হাইকমিশনের অনুদানে নরসিংদী জেলা প্রশাসন এবং ঐতিহ্য অন্বেষণ নামের একটি প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা কেন্দ্র কর্তৃক মূল অবকাঠামো অক্ষুণ্ন রেখে বাড়িটি সংস্কার এবং প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর নির্মাণ করা হয় । বাড়িটিকে সাজানো হয়েছে ব্রিটিশ আমলের কাঠ ও আসবাবপত্র দিয়ে । মূল কাঠামোর সংস্কারকাজে ব্যবহার করা হয়েছে ইট, চুন, সুরকি এবং যশোরের টালি।

সংস্কার শেষে জাদুঘরে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে ভাই গিরিশ চন্দ্র সেনের বাস্তুভিটায় আবিষ্কৃত প্রত্নবস্তু, সমসাময়িক তৈজসপত্র, পোশাক ও আসবাবপত্র । প্রদর্শন করা হয়েছে ভাই গিরিশ চন্দ্র সেনের অনূদিত পবিত্র কোরআন শরীফ ও তাঁর অন্যান্য গ্রন্থসমূহ । বাংলা বর্ণ ও ভাষার উৎপত্তি এবং বিকাশও জাদুঘরে প্রদর্শিত হচ্ছে । এছাড়া বাংলা ভাষার জন্য বাঙালির লড়াই-সংগ্রাম (১৯৪৭-১৯৫৬), স্বাধিকার-স্বাধীনতা-মুক্তি সংগ্রাম এবং বিজয় অর্জনও প্রদর্শিত হচ্ছে (১৯৫৪-১৯৭১) । বাড়ির সামনে বসানো হয়েছে গিরিশ চন্দ্রের সংক্ষিপ্ত জীবনীসহ আবক্ষ মূর্তি ।

যেভাবে যাবেনঃ-

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে পাঁচদোনা বাজার সংলগ্ল বুড়ারহাট গ্রামে পৌছাতে হলে গুলিস্তান থেকে  বাসে চড়ে প্রথমে আসতে হবে নরসিংদী। সেখান থেকে সিএনজি করে সরাসরি পাঁচদোনা গ্রামে পৌঁছানো যায়।